Author: Syed Munir Khasru

Area of Work: Migration And Resettlement

SMK
পৃথিবীতে প্রতিদিন প্রায় ৩৪ হাজার মানুষ প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়ের কারণে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়। শুধু গত ছয় মাসে ভূমধ্যসাগরে দুই হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। জুনের শেষ সপ্তাহে ১২ হাজার ৬০০ অভিবাসী সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইতালিতে এসে পৌঁছায়। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও ইউরোপের দেশগুলো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপে জেরবার হয়ে যাচ্ছে, যেখানে এই অভিবাসীদের গন্তব্য ইউরোপ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেক ক্ষেত্রে সহায়তাও মিলছে না। যে হারে জোরপূর্বক অভিবাসন হচ্ছে, তাতে যেসব প্রতিষ্ঠান শেষ আশ্রয় হিসেবে কাজ করত, তাদের মধ্যকার অনেক ভুল বেরিয়ে আসছে। দুর্বল লক্ষ্য, অপর্যাপ্ত তহবিল, অসংগঠিত কাঠামো ও বৈশ্বিক শাসনকাঠামোর অভাবে আন্তরাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো কর্তৃত্ব নিয়ে কাজ করতে পারছে না। জগতের সবচেয়ে দুর্বল মানুষের জন্যও তারা কাজ করতে পারছে না।

গত সপ্তাহে জার্মানির এক অনুষ্ঠানে বলেছিলাম, ৭-৮ জুলাই জি-২০ সম্মেলনে নেতারা অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে পারেন। তাঁরা একটু সক্রিয় হয়ে অভিবাসীদের সুরক্ষা নীতি প্রণয়ন করতে পারেন, যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক নেতাদের ওপর মানুষের আস্থা বাড়বে। যদিও আগের সম্মেলনগুলোতে কথা বলার বিষয় ছাড়া আর কিছু উঠে আসেনি, এবার কিছু কাজ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ, এবার সম্মেলনটা হচ্ছে ইউরোপের শহর হামবুর্গে, যে ইউরোপ অভিবাসনের সংকট গভীরভাবে অনুভব করছে। বর্তমানে কিছু নামসর্বস্ব অলাভজনক ও বহুপক্ষীয় সংস্থা এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে থাকে, যার মধ্যে রিফিউজি ইন্টারন্যাশনাল (আইআর) ও মেডসা সঁ ফঁতিয়ের (এমএসএফ) মতো স্বাধীন সংগঠনও আছে। কিন্তু আন্তসরকার পর্যায়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস হাইকমিশনার ফর রিফিউজিস (ইউএনএইচসিআর) ও ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) ব্যাপক চাপের মুখে আছে।

ইউএনএইচসিআরের কিছু সুনির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জ আছে। শুরুতে বলে রাখি, এই সংস্থার বৃহত্তর পরিসরে ক্ষমতা প্রয়োগের শক্তি নেই, যাদের অবশ্যই সরকারি সহযোগিতার ওপর নির্ভর করতে হয়, বিরোধাত্মক পরিবেশে যা নিশ্চিত নয়। যে নাগরিকেরা ১৯৫১ সালের রিফিউজি কনভেনশন মেনে চলে, তারা কখনোই পুরোপুরি এই রীতি মেনে চলেনি। এতে তার কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। রাষ্ট্র সহযোগিতা না করলে ইউএনএইচসিআরের কিছু করার থাকে না। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হাইতি ও কিউবার নাগরিকদের অভিবাসনের সময় ব্যাপারটা আমরা দেখেছি।

ইউএনএইচসিআরের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাও আছে। মাঠপর্যায়ে এরা নিয়মিতভাবে অভিবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে না। তাদের সরাসরি খবর সংগ্রহ করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আশ্রয়দানকারী দেশ ইউএনএইচসিআরকে না জানিয়ে জোরপূর্বক অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করলে এই সংস্থার নির্ভরযোগ্যতা বিনষ্ট হয়, এমনকি তারা অযোগ্য না হলেও।

বর্তমানে ইউএনএইচসিআর স্বাধীন ও দলনিরপেক্ষ সংস্থা নয়, যেটা তারা দাবি করে থাকে। ত্রাণ তৎপরতা চালাতে এরা দাতা ও স্বাগতিক দেশের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল, এদের স্বার্থের কাছে এরা বাঁধা পড়ে আছে। আর কাজ করার জন্য রাজনৈতিক সমর্থন দরকার, সেটা তার সব সময় থাকে না।

অভিবাসন-বিষয়ক আরেকটি বড় বহুপক্ষীয় সংস্থা হচ্ছে আইওএম। এদের কাজ হচ্ছে, অভিবাসী, আশ্রয়প্রত্যাশী, শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণভাবে স্থানচ্যুত মানুষকে নিজ ঘরে ফিরে যেতে সহায়তা করা, অথবা কোনো দেশ যদি তাদের নিতে রাজি হয়, সেই দেশে তাদের পাঠানো। কিন্তু ইউএনএইচসিআরের মতো পরিচালন–প্রক্রিয়ার দুর্বলতার কারণে এরা কমজোর হয়ে পড়েছে।

সুনির্দিষ্টভাবে বললে, জাতীয় সরকারগুলো শরণার্থীদের দেশে ফেরত পাঠাতে বা অন্যত্র স্থানান্তর করতে চাপ প্রয়োগ করছে কি না, সেটা মূল্যায়ন করা আইওএমের কাজ। আবার শরণার্থীরা যেখানে চলে যাচ্ছে, সেখানকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সক্ষমতাও তার নেই। কোটি কোটি মানুষ আইওএমের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্প ও কর্মসূচির কারণে লাভবান হয়েছে। কিন্তু ২০১৬ সালে ‘অংশীদার প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে জাতিসংঘে যুক্ত হওয়ার আগে শরণার্থীদের অধিকার রক্ষার আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা তার ছিল না। এমনকি এখনো সে বাজেটস্বল্পতায় ভোগে, ফলে তার পক্ষে এত বড় লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হয় না। তার কর্মসূচির চাহিদা বাড়লেও তহবিল আর বাড়ে না। তার কাজ মূলত প্রকল্পভিত্তিক, যেখানে সদস্যরাষ্ট্রগুলো তহবিল জুগিয়ে থাকে। ফলে শরণার্থীদের সংকট হ্রাসে তার ভূমিকা সদস্যরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার ও পছন্দের ওপর নির্ভরশীল।

পৃথিবীর অভিবাসীদের সবচেয়ে বড় অভিভাবক হিসেবে এই দুটি প্রতিষ্ঠানকে আজকের চ্যালেঞ্জের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে হবে। আন্তসংস্থা সমন্বয় ও খরচ ভাগাভাগি করার জন্য উদ্যোগ জরুরি। বর্তমান বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটাতে শরণার্থী সনদ ও আশ্রয় প্রদান নীতির ভাষায় পরিবর্তন আনতে হবে। শরণার্থীদের রক্ষায় সামগ্রিক ও ধারাবাহিক নীতি গ্রহণ করতে হবে। এই লক্ষ্যে উভয় সংগঠনের সদস্যদেশগুলোকে আরও বেশি করে জাতিসংঘের কাঠামোয় যুক্ত হতে হবে। এতে সংস্থাগুলো আরও প্রভাবশালী হবে, তখন তাদের পক্ষে জোরপূর্বক স্থানচ্যুতির কারণে হাত দেওয়া সম্ভব হবে।

জি-২০ সম্মেলনে নেতারা এই ব্যাপারগুলো ভেবে দেখতে পারেন। ইউএনএইচসিআর ও আইওএম শক্তিশালী বহুপক্ষীয় সহযোগিতার নীতির কারণে লাভবান হতে পারে, জি-২০ সেটা করার মতো দারুণ জায়গায় আছে। আমরা যদি যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, দুর্নীতি ও দারিদ্র্য থামাতে না পারি, তাহলে দ্বিতীয় সর্বোৎকৃষ্ট সমাধান হচ্ছে, পলায়নরত মানুষকে যারা সহযোগিতা করে, সেই সংগঠনগুলোকে উন্নত করা।

অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

সৈয়দ মুনির খসরু: ইনস্টিটিউট ফর পলিসি, অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের চেয়ারম্যান

Weblink:http://www.prothom-alo.com/opinion/article/1242106/%E0%A6%85%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%80%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%A8

Write a Reply or Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


*